প্রেম রসায়নে ওগো সর্বজনপ্রিয় “বিজ্ঞানী স্যার পি.সি. রায়"


pc ray
শরিফুল ইসলাম হিরণ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলার সামনে ছবির হাটে প্রতিদিনের মত আজও আমরা আড্ডা মারছিলাম। আমি ও মারুফ। বিভিন্ন কথার মধ্য দিয়ে এক সময় আমরা সিদান্ত নিলাম বিজ্ঞানী পি.সি. রায় এর বাড়ি ভ্রমণে যাব। সময়টি ছিল শীতকাল, তাই আর দেরী সহ্য হচ্ছিল না। যে কথা সেই কাজ সামনে আমাদের দুই দিনের ছুটি আছে। সে সময় ঘুরে আসা যাবে বিজ্ঞানির বাড়ি থেকে। দেখতে দেখতে একসময় সেই কাঙ্খিত দিন আসল। প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র গুছিয়ে নিয়েছি ব্যাগে করে। রাত ১০ টার সময় খুলনাগামী ট্রেনে উঠব আমরা। কিন্তু এখন বিকাল ৪টা। এখনও ৭ ঘন্টা পর ট্রেন ছাড়বে। আমাদের আর মন মানছিল না, আমি মারুফকে বললাম কাঁটা- লাইনে মাওয়া হয়ে খুলনা যাওয়া যাবে। সময় লাগবে ৬ ঘন্টা। ও বলল চল যাওয়া যাক। অন্তত ট্রেনে উঠার আগেই খুলনা পৌছে যাব আমরা।
আমরা রওনা হলাম, বাসে গুলিস্থান থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্য। বাস ছাড়ল দেখতে দেখতে ঢাকার যানযাট ভেঙ্গে সুন্দর রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে। গাড়ির জানলার ফাঁকদিয়ে চোখে পড়ল নীল আকাশ, সবুজ পরিবেশ। দেখতে দেখতে এসে পৌঁছালাম মাওয়া ঘাটে। মাওয়া পদ্মা নদীর ঘাট থেকে কাওড়াকান্দি লঞ্চে উঠলাম আমরা। বসলাম লঞ্চের ছাদে। বিকালে পদ্মা নদীতে এরকম লঞ্চ ভ্রমন সত্যিই অপূর্ব। যেদিক চোখ যায় সেদিক পানি আর পানি। মাঝে মধ্যে পদ্মার বিশাল চরে কাশ-ফুল যেন উকি মারছে। লঞ্চের পাশ দিয়ে সজোরে স্পীডবোড ছুটে চলে গেল। মাঝে মধ্যে মাছ ধরার নৌকা চোখে পড়ল। এর মধ্যে কাওড়াকান্দি ঘাটে এসে পৌঁছালাম, ঘাট থেকে গাড়ি-স্টান্ডে আসতেই খুলানার বাস ও মাইক্রোর ডাকাডাকি শুরু হল। আমরা মাইক্রোতে উঠলাম।

মাইক্রোতে আর মাত্র দু’জন হলে ছেড়ে যাবে। আমরা স্টান্ডে এক হোটেল থেকে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলাম, এবার কলা ও চা খেলাম। এরই মধ্যে ডাক এলো গাড়িতে উঠার, আমরা গাড়িতে উঠলাম। মাইক্রো চলা শুরু হল এখন সাড়ে ৬টা বাজে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারলাম না, হঠাৎ গাড়ি ব্রেকে ঘুম ভাঙ্গল উঠে দেখি মারুফ ঘুমাচ্ছে। গাড়ির জালানার ফাঁক দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলাম এটা কোন জায়গা। ড্রাইভার কে বললাম ভাই এটা কোন জায়গা? উনি বললেন কাঁটাখালি মোড়, খুলনায় পৌঁছাতে আর মাত্র ২০মিনিট লাগবে। ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকলাম, এখন ৮টায় ৫৫মিনিট। গাড়ি এসে রূপসা ঘাটে থামল। আমরা দ্রুত নেমে পড়লাম।
 

ঘাট পার হয়ে ইজিবাইক নিয়ে সোজা চলে আসলাম হোটেল সিটি ইনে। আগে থেকে এ হোটেলটা আমার চেনা-জানা ছিল। হোটেলে যেয়ে দেখি একটা মাত্র সিঙ্গেল সিট খালি, বুকিং করে নিলাম। এখন করার কি, একটা সিটে দু’জন ডাবলিং করে থাকতে হবে। জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে চলে আসলাম নিচে। রেষ্টুরেন্টে সবজি, রুটি ও চিংড়ি দিয়ে রাতে খাবার সারলাম। খাবার শেষে কোনদিকে না গিয়ে হোটেল রুমে ফিরে গেলাম। খুব সকালে উঠতে হবে বলে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল শুক্রবার পাইকগাছা রাড়–লিয়া-কাটিপাড়া বিজ্ঞানি স্যার পি সি রায় এর বাড়িতে যেতে হবে।
 
 
সকালবেলা নাস্তা সেরে, হোটেলের বিল মিটিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। খুলনার সোনাডাঙ্গা-বাসস্টান্ড থেকে পাইকগাছা ৬০ কিলোমিটারের মত রাস্তা। যখন পাইকগাছার গাড়িতে উঠলাম তখন সকাল ৭টা। শীতের কুয়াশার চাঁদর ছিড়ে গাড়ি ছুটে চলল পাইকগাছা রাড়–লিয়া-কাটিপাড়ার দিকে। সকালের সূর্যটা যখন ভোরের শীশিরে পড়ল। মনে হল যেন, এক একটি শিশির দানা এক একটি মুক্তার কণা। রাস্তার চারিদিকে গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবি কৃষকের কর্মব্যস্ত সময়, পুরোনো দিনের জমিদার বাড়ি, মসজিদ, মন্দির সহ অসংখ্য নিদর্শন দেখছি আর ভাবছি মহান সৃষ্টিকর্তার অপরূপ নিয়ামত। বাস যথা সময় এসে পৌঁছালো গদাইপুর-মোড়ে। গাড়ী থেকে নামতেই হকার এগিয়ে এলো দিনের কাগজ নিয়ে। পত্রিকা পড়া আমার নিত্যদিনের অভ্যাশ। তাই লুফে নিলাম একটি।
এবার পি সি রায় যে মহালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেটি ঠাকুর দালানের পাশে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। ভিতরে যাওয়ার কোন উপায় দেখছিনা, একসাইডে কাটাতারের বেড়া সেটা টপকে ভিতরে গেলাম। মোনে হচ্ছে অন্ধকার এক ভুতুড়ে বাড়িতে এসে পড়েছি। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সুনসান নিরবতা, ভর দুপুর আসে পাসে কোন মানুষের সাড়াশব্দ নেই। আমরা ২জন হওয়ার সত্ত্ব্ওে ভয়-ভয় লাগছে। চারিদিকটা ঘুরে ফিরে বেশ কিছু ছবি তুললাম। বেরিয়ে এলাম পিসি রায়ের বাড়ি থেকে। পুকুর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম কো-অপারেটিভ ব্যাংক। 
এবার স্থানীয় যানবহন ভ্যান গাড়িতে করে বোয়ালিয়া খেয়াঘাট পৌছলাম। ঐতিহাসিক কপোতা নদ পার হলাম নৌকাতে করে। মাঝ নদীতে গিয়ে মনে মনে ভাবলাম এই সেই কপোতা নদ। মাইকেল মধূ সূদনের স্মৃতি বিজড়িত। এক কালের খরস্রোতা এ কপোতা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। তব্ওু এ জায়গাটি এখনও কিছুটা গভীর আছে। ঢেউয়ের তালে তালে ঘাটে এসে ছোট্ট একটি ধাক্কা খেয়ে বাস্তবে ফিরে এলাম। ঘাট থেকে মটর সাইকেলে এসে পৌঁছালাম বাঁকা বাজারে।
  
এই বাঁকা বাজারটি খুলনা জেলার একেবারে শেষ সীমানায়। এখান থেকেই শুরু হয়েছে সাতীরার নতুন সীমারেখা। দুই জেলার মধ্যবর্তী স্থানে দাড়িয়ে এই প্রাচীন বাজার এখনো পুরনো দিনের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। এখানে এখনও প্রতিদিন সকাল-বিকাল বাজার বসে। তবে বিকালে যেন একটু জমজমাট বেশিই হয়। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলো দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় আসে চাল, ডাল আর কিছু তাজা তরি তরকারী নিতে। অনেক সময় সাথে আসে কচি কাচা বাচ্চারা। একটি চায়ের দোকানে ঢুকে চা খেতে খেতে কিছুটা রেষ্ট নিলাম। চা খেতে যেয়ে আমার সঙ্গে পরিচয় হল সাংবাদিক আহম্মদ-আলী বাচা এর সাথে। তিনি আমাদের সাথে কিছুটা সময় দিলেন। তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কাঙ্খিত পথের ল্েয রওনা হলাম। 

বিজ্ঞানি স্যার পিসি রায়ের বাড়িতে গেলাম, প্রথমে চোখে পড়ল বিজ্ঞানি স্যার পিসি রায়ের পাঁথর দিয়ে নির্মিত ছবি। এর একটু সামনে এগোতেই সান বাঁধানো পুকুর ঘাট, পুকুরের ধাঁরে সাবপোষ্ট অফিস, আর তার পাশের গেট দিয়ে  পি সি রায়ের বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম। মাঝখানে বিশাল বড় উঠান। উঠানের চারপাশদিয়ে নির্মিত পিসি রায়ের জমিদার বাড়ি। চারিদিক থেকে কেমন যেন পোড়ামাটির গন্ধ নাকে এসে পড়ল । প্লাষ্টার খসে ছিরিহীন হয়ে পড়েছে বাড়িগুলো। উঠানের মাঝখানে দাঁড়ালে হাতের ডানদিকে দু’তলা জমিদার বাড়ি, তার পাশে ঠাকুর ঘর এবং হাতের বাম পাশে একতলা ভবন, তাছাড়াও সামনে একটি একতলা ভবন, মোটকথা উঠানের চারিপাশদিয়ে জমিদারবাড়ির ভবনগুলো। এ বাড়িগুলোর মোট দরজার সংখ্যা ৪৫, জানালা ১৩০ টার মত। বাড়িগুলো যে পিলারের উপর দাড়িয়ে আছে তার সংখ্যা ১৭০ টারও বেশি। পি সি রায়ের জমিদার বাড়ি দেখলে বোঝাযায় আগেরকার দিনের ঐতিহ্য।

বাড়ির পিলারের উপর ফুল ও লতাপার নকশা, মার্বেল পাথরের মেঝে গুলো এখনো প্রায় অত অবস্থায়। দু’তলা ছাদের উপর চোখ পড়তেই দেখতে পেলাম সিংহের মুর্তি। ভারী রাশ নিয়ে সাদর সম্ভাষণ জানাতে যেন দাড়িয়ে আছে। এখানে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে আড়াইটা বাজল তা বুঝতে পারলাম না। এ বাড়িটা দেখলে মনে হবে পুরো ভূতুরে বাড়ি। প্রতিটি রুম, সাদের পাশ ও চিলেকোঠা একা একা দেখলে নস্টালজি কাজ করবে। মনে হবে অদৃশ্য পিসি রায় এর জমিদার বংশধর দের আত্মরা কলকাতানি করছে।

কিছুদুর চলার পর নজরে এলো আর.কে.বি.কে.হরিশ চন্দ্র ইনষ্টিটিউট কলেজ। দেখলাম বিশাল এরিয়া নিয়ে নির্মিত পুরাতন ও নতুন ভবন। সেখানে গিয়ে কথাহল কলেজের অধ্যরে সাথে। তিনি আমাদের চা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। কলেজের অফিস থেকে বেরিয়ে আসার পথে ভূবন মোহিনীর বালিকা বিদ্যালয় ঘুরে ফিরে দেখলাম। বিদ্যালয় দেখা শেষ হলে মন আর এক পাও চলতে সায় দিচ্ছিল না। প্রচন্ড ুধা এসে ঘিরে ধললো আমাদের। তাই আর কোন কিছু চিন্তা না করে বাঁকা বাজারে চলে আসলাম দুপুরের খাবারের জন্য। এখাতে তেমন ভালো হোটেল নেই। তব্ওু একটু খোঁজ নিয়ে একটি হোটেলে গেলাম ভাল কিছু খাবারের আশায়। খাওয়া শেষ করে হোটেলেই একটি বিশ্রাম নিলাম। বিকালে দেখা করলাম স্থানীয় শিক ও পিসি রায় গবেষক জয়ন্ত কুমার ঘোষের সাথে। তিনি আমাদের সুনালেন পিসি রায় এর জীবনী। 
 

রসায়নবিদ বিজ্ঞানী পি,সি,রায়: বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী রসায়নবিদ স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পি,সি,রায়)। এই অমর বিজ্ঞানী খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রাড়ুলী গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন। তার জন্ম গৌরবে শুধু তার জন্মভূমি দণি খুলনার অবহেলিত জনপদ পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী গ্রামই ধন্য হয়নি বরং সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষ তার জন্ম গৌরবে গৌরবান্বিত। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ছিলেন একজন ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ। তিনি নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন এইভাবে “আমি বৈজ্ঞানিকের দলে বৈজ্ঞানিক, ব্যবসায়ী সমাজে ব্যবসায়ী, গ্রাম সেবকদের সাথে গ্রাম সেবক, আর অর্থনীতিবিদদের মহলে অর্থনীতিজ্ঞ।” রসায়ন শাস্ত্রে অসামান্য অবদানের জন্য আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় দুনিয়া জুড়ে পরিচিত হন।

পিতা আরবী, ফার্সী ও ইংরেজী ভাষায় দ জমিদার হরিশ্চন্দ্র রায়। মাতা ভূমন মোহিনী দেবী একজন গৃহিনী। পিতা-মাতার আদরের সন্তানটি হলেন প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। পিতা তাকে ডাকতেন ফুলু বলে। ছোটবেলায় মায়ের নিকট শিার হাতেখড়ি। ফুলুর শিা জীবন শুরু হয় পাঁচ বছর বয়স থেকে। এরপর পাঠশালা এবং পরে পিতার প্রতিষ্ঠিত এম.ই. স্কুলে ৯ বছর পর্যন্ত লেখাপড়া করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কোলকাতায় চলে যান। ১৮৭২ সালে কোলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৭৪ সালে ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ার সময় গুরুতর রক্ত-আমাশয়ে আক্রান্ত হওয়ায় ২ বছর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। এই পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাওয়া তার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে উঠে। 
 
এই সময় পিতা হরিশ চন্দ্র রায়ের লাইব্রেরীতে পড়াশুনা করে পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডারের সন্ধান পান। ১৮৭৬ সালে কেশব চন্দ্র সেন প্রতিষ্ঠিত ‘আলবার্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৮৭৮ সালে তিনি প্রথম বিভাগ পেয়ে প্রবেশিকা পরীায় উত্তীর্ণ হন। বৃত্তি না পাওয়ায় তার শিকরা নিরাশ হলেও তিনি মনে করতেন “পরীার নম্বরই মানুষের জীবনের শেষ কথা নয়”, যারা পরীায় ভালো করেছে তারা অনেকেই পরবর্তী জীবনে লোকচুর আড়ালে চলে গেছে। জীবনের েেত্র সাফল্যের জন্য স্থির ল্য ও সুষ্ঠুভাবে অধ্যাবসায়ের সঙ্গে শিালাভ অনেক বেশী ফলপ্রদ। 

১৮৮০ সালে মেট্রোপলিটন (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) থেকে ২য় বিভাগে এফ.এ. পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে বি.এ. ভর্তি হন। ১৮৮২ সালে তিনি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি লাভ করে লন্ডন চলে যান এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এস.সি তে ভর্তি হন। ১৮৮৫ সালে ঐ কলেজে পড়ার সময় ‘সিপাহী বিদ্রোহের আগে ও পরে’ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখে ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ডে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে Essay on India নামে প্রবন্ধটি বই আকারে প্রকাশিত হয়।

এডিনবার্গ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে বি.এস.সি পাশ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য গবেষনা শুরু করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিলো “অন পিরিয়ডিক কাসিফিকেশন অফ এলিমেন্টস”। ১৮৮৭ সালে তিনি সফলতার সাথে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষনা পত্রটি শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হওয়ায় তাকে ১০০ পাউন্ড ‘হোপ প্রাইজ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়ার পরও তিনি আরও এক বছর “অন এ্যানালিসিস অফ ডাবল সালফেটস এন্ড দেয়ার কৃস্টাল বিহেভিয়ার” বিষয়ে সেখানেই গবেষনা করেন।

পড়াশুনা শেষ করে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় দেশে ফিরে আসেন এবং প্রথমে প্রেসিডেন্সি কলেজ এ এবং পরবর্তীতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান কলেজে পালিত অধ্যাপক এবং ১৯৩৭ সাল থেকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমৃত্যু (Emiritius Professor) এমিরিটাস প্রফেসর হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন।

শিক হিসেবে পড়ানোর সময় উদ্দীপক উপাান বর্ণনার মত করে সাহিত্যের প্রাঞ্জল ভাষায় রসায়নের বিষয়গুলি তিনি ছাত্রদের নিকট তুলে ধরতেন। আত্মচরিত তিনি বলেছেন “ প্রেসিডেন্সি কলেজে আমার ২৭ বছর অধ্যাপনা জীবনে আমি সচেতনভাবে প্রধানত: নিচের কাসেই পড়াতাম। কুমোর যেমন কাদার ডেলাকে তার পচ্ছন্দমত আকার দিতে পারে হাই স্কুল থেকে সদ্য কলেজে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের তেমনি সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যায়। আমি কখনও কোন নির্বাচিত পাঠ্যবই অনুসরন করে পাঠদান দিতাম না”। শিক হিসেবে তিনি বলতেন “ সর্বত্র জয় অনুসন্ধান করিবে কিন্ত পুত্র ও শিষ্যের নিকট পরাজয় স্বীকার করিয়া সুখী হইবে। 

একজন শিক তার ছাত্রকে কতটুকু ভালোবাসেন বা দিকনির্দেশনা দেন তার প্রমান পাওয়া যায় আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের কর্মকান্ডে। ফজলুল হক (শের-এ বাংলা) ৫/৬ দিন কাসে না আসলে একদিন বিকালে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় তার বাসায় যান। ফজলুল হক তখনও খেলার মাঠে থাকায় তিনি তার জন্য অপো করেন। ফজলুল হক ফিরে এসে স্যারকে দেখে তিনি কতন এসেছেন জানতে চাইলে বলেন “তোমাদের হিসেবে এক ঘন্টা আর আমার হিসেবে ষাট মিনিট”।

শিক হিসেবে স্যার পিসি রায়ের নিরপেতা ও ধর্ম বিষয়ে উদারতার প্রমান পাওয়া যায়। ১৯১৫ সালে কুদরত-ই খুদা (একমাত্র মুসলিম ছাত্র) এম.এস.সি তে (রসায়ন) প্রথম শ্রেনী পাওয়ায় কয়েকজন হিন্দু শিক তাকে অনুরোধ করেন প্রথম শ্রেণী না দেওয়ার জন্য, কিন্ত আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় রাজী না হওয়ায় তারা প্রস্তাব দেন একজন হিন্দু ছেলেকে ব্রাকেটে প্রথম শ্রেণী দেয়ার জন্য, তিনি সে প্রস্তাবেও সম্মত হন নি।

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একই প্রতিষ্ঠানের, একই সময়কার শিক ও বিজ্ঞানী ছিলেন। কিন্ত স্যার পি.সি রায়ের ছাত্ররাই পরবর্তীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন, সে কারনেই স্যার পি.সি. রায়কে “বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী” বলা হত। তার কৃতি ছাত্রদের মধ্যে শের-এ বাংলা এ,কে ফজলুল হক, ড: মেঘনাথ সাহা, হেমেন্দ্র কুমার সেন, বিমান বিহারী দে, ড: কুদরত-ই-খুদা, প্রিয়দা ভন্জন রায়, জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায়, জ্ঞান চন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্র নাথ মুখোপদ্যায়, রাজেন্দ্র লাল দে, প্রফুল্ল কুমার বসু, বীরেশ চন্দ্র গুহ, অসীমা চ্যাটার্জী প্রমূখ।

১৯১২ সালে লন্ডনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ড: প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারীকে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে পাঠান। এই সময় ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় পি.সি. রায়কে সম্মান সূচক ‘ডক্টরেট’ উপাধি প্রদান করেন। এছাড়া তিনি কলিকাতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মহীশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

তার গবেষনা পত্রের জন্য স্যার উইলিয়াম রামসে তাকে অভিনন্দন জানান। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড: এইচ. ভেলি স্বাগত জানিয়ে বলেন, “তিনি (অধ্যাপক রায়) সেই আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা প্রতিনিধি- যে জাতি সভ্যতার উচ্চস্তরে আরোহণ করত: এমন এক যুগে বহু রাসায়নিক সত্যের আবিস্কার করিয়াছিলেন, যখন এদেশ (ইংল্যান্ড) অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। অধ্যাপক রায় এ্যামোনিয়াম নাইট্রাইট সম্মন্ধে যে সত্য প্রমান করিয়াছেন তাহা প্রচলিত মতবাদের বিরোধী।” একই বছর স্যার পি.সি রায় ব্রিটিশ সরকার কতৃক Companion of the Indian Empire(C.I.E.) উপাধিতে ভূষিত হন এবং ১৯১৯ সালে “নাইট” উপাধি দিয়ে ব্রিটিশ সরকার তাকে সম্মানিত করেন। ১৯৩২ সালে স্যার পি.সি রায়ের সত্তরতম জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর। সভাপতির ভাষনে কবিগুরু বলেন ‘আমরা দুজনে সহযাত্রী, কালের তরীতে আমরা প্রায় একঘাটে এসে পৌছেছি। পরে কবিগুরু আচার্যদেবের হাতে একটি তম্রিফলক উপহার দেন। কবির স্বরোচিত দুটি ছত্র তাতে উৎকীর্ণ ছিলো-
‘প্রেম রসায়নে ওগো সর্বজনপ্রিয়
করিলে বিশ্বের জনে আপন আত্মীয়।’

১৮৮৭ সালে ডক্টরেট ডিগ্রিলাভের পর বিজ্ঞানের গবেষনায় স্যার পি.সি. রায়ের যে যাত্রা শুরু হয়েছিলো, ১৮৯৫ সালে মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিস্কারের ফলে সফল বিজ্ঞানী হিসেবে তার স্বীকৃতি মেলে। এরপরে ১২ টি যৌগিক লবন ও ৫ টি থায়োষ্টার আবিস্কার এবং ১৪৫ টি গবেষনা পত্র প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ডাচ একাডেমী লন্ডনের রসায়ন সমিতি তাকে অনারারী ফেলো নির্বাচিত করেন।

হিন্দু রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস লিখে স্যার পি.সি. রায় ১২০০ শতাব্দী এবং তারও পূর্বের ভারতবর্ষের রসায়ন চর্চার ইতিহাস তুলে ধরে প্রমান করেন, যখন ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ গাছের ছাল বা বাকল পরে লজ্জা নিবারণ করতো, তখন ভারতবর্ষের মানুষ পারদের ব্যবহার এবং সাতন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত ছিলো। 
স্যার পি.সি. রায় ১৮৯২ সালে বেঙ্গল কেমিক্যাল এ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরর্তীতে “বেঙ্গল কেমিকেল এ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কাস লি:” নামে ১৯০১ সালের ১২ এপ্রিল আত্মপ্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে নিজ জেলা খুলনার মানুষের কমর্সংস্থানের কথা চিন্তা করে সমবায় ভিত্তিক “প্রফুল্ল চন্দ্র কটন টেক্সটাইল মিলস লি:” প্রতিষ্টা করেন।

১৯০১ সালের ডিসেম্বরে গান্ধীজি মহামতি গোখলের সাথে কলিকাতায় আসলে, তিনি তার সাথে স্যার পি.সি. রায়ের পরিচয় করিয়ে দেন। গান্ধীজির মুখে প্রবাসী ভারতীয়দের দু:খ-দুর্দশার কথা শুনে কলিকাতাবাসীদের এ বিষয়ে জানানোর জন্য ১৯০২ সালের ১৯ জানুয়ারী কলিকাতার আর্লবাট হলে (বর্তমান কফি হাউজ) এক সভার ব্যবস্থা করেন। তখনকার দিনে এই সভা এতই সফল হয়েছিলো কলিকাতার সকল সংবাদপত্র এ বিষয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গান্ধীজির অনাড়ম্বরপূর্ন জীবন ও মানুষের জন্য তার মমত্ববোধ স্যার পি.সি. রায়ের জীবনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিলো বলেই তিনি নিজেকে কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন। 

বৃটিশ গোয়েন্দা দপ্তরে স্যার পি.সি. রায়ের নাম লেখা ছিল “বিজ্ঞানী বেশে বিপ্লবী”। ১৯১৯ সালে ১৮ জানুয়ারী রাউলাট আইনের বিরুদ্ধে টাউন হলে চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে এক সভা হয়। স্যার পি.সি.রায় সেখানে যোগ দিয়ে বলেন ‘আমি বৈজ্ঞানিক, গবেষণাগারেই আমার কাজ, কিন্ত এমন সময় আসে যখন বৈজ্ঞানিককেও দেশের আহবানে সাড়া দিতে হয়। আমি অনিষ্টকর এই আইনের তীব্র প্রতিবাদ করছি।

১৯২৫ সালের জুনে বর্তমান সাতীরা জেলার তালার সৈয়দ জালাল উদ্দীন হাসেমী ও ডুমুরিয়ার মাওলানা আহম্মদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে অসহযোগ আন্দোলন প্রচারে গান্ধীজি খুলনায় আসলে স্যার পি.সি. রায় স্টিমার ঘাঠে তাদের স্বাগত জানান। স্যার পি.সি.রায় ছিলেন সম্বর্ধন কমিটির সভাপতি। ১৯২৫ সালে কোকনাদ কংগ্রেসের কনফারেন্সে সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ আলীর অনুপস্থিতে কিছু সময় স্যার পি.সি. রায় সভাপতিত্ব করেন। একই সময় পাইকগাছা উপজেলার কাটিপাড়ায় “ভারত শেবাশ্রেম” নামে একটা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে নিজ জন্মভূমির এলাকার মানুষকে চরকায় সুতো কাঠার মাধ্যমে স্বদেশী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। বিজ্ঞান কলেজের বারান্দায় একটা চরকা স্থাপন করে তিনি নিজেও সুতা কাটতেন। ১৯৩০ সালে কংগ্রেসের লবন আইন অমান্য আন্দোলনের খুলনা জেলার স্থান হিসেবে স্যার পি.সি. রায়ের নিজের গ্রাম রাড়ুলিকে নির্বাচন করেন।

১৯০৩ সালে পিতার প্রতিষ্ঠিত এম.ই স্কুলকে উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে রুপান্তরিত করেন এবং তিনি ও তার ভাই নলিনী কান্ত রায় চৌধুরী -রাড়ুলী, বাকা, কাটিপাড়া, খেসরা প্রভৃতি গ্রামের বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের এক সভা থেকে আর.কে.বি.কে. হরিশচন্দ্র ইনষ্টিটিউট নাম করন করেন। একই স্থানে স্যার পিসি রায়ের পিতা উপমহাদেশে নারী শিা উন্নয়নকল্পে ভূবনমোহিনীর নামে ১৮৫০ সালে রাড়–লী গ্রামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। 

১৯১৮ সালে বাগেরহাটে তার অর্থানুকূল্যে বাগেরহাট কলেজ স্থাপিত হয় যা পরে স্যার পি.সি. রায়ের আপত্তি সত্বেও তারই ছাত্র শের-এ-বাংলা ফজলুল হকের প্রস্তাবে পি.সি. কলেজ নামে পরিচিতি পায়। এছাড়া সাতীরা চম্পাপুল স্কুলও স্যার পি.সি. রায়ের অর্থানুকূল্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

উল্লেখ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পিসি রায় ১৯২৬ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত ১ ল ৩৬ হাজার টাকা দান করেন। খুলনার দৌলতপুর বিএল কলেজ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ, বরিশালে অশ্বর্ণী কুমার ইনষ্টিটিউশন, যাদবপুর হাসপাতাল, চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতাল সহ প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানে তিনি অর্থনৈতিক অনুদান দিয়েছেন। দেশ বিদেশে তার স্থাপিত প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞান সাধনায় স্মরণ করছে সর্বস্তরের মানুষ। 
 
স্যার পি.সি.রায় বাঙালী জাতিচেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং দেশের সমবায় আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। তদানিন্তন সময়ে পল্লী মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায় ব্যাংক পদ্ধতি চালু করেন। ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯২৩ সালে দুর্ভি মোকাবিলায় ধর্মগোলা ও সমবায় ভান্ডার স্থাপনের পরামর্শ দেন। ১৯১৭ সালে বেঙ্গল কেমিক্যাল সমবায় সমিতি, ১৯১৮ সালে বঙ্গবাসী কলেজ কো-অপারেটিভ ষ্টোর এন্ড কেন্টিন, ১৯২১ বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সোসাইটি সহ অনেক সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

আজও প্রতিষ্ঠানগুলো স্বমহিমায় এগিয়ে চলছে। দেশ-বিদেশে তার স্থাপিত প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞান সাধনায় ফলক স্মরণ করে সর্বস্তরের মানুষ। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। ১৯৪৪ সালে ১৬ জুন কোন উত্তরসূরী না রেখে জীবনাবসান ঘটে বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের। শেষ জীবনে তার স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছিলো, স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতেন না, এমন কি নিজের বিছানা ছেড়ে উঠে বসতে পারতেন না। তার মৃত্যুর খবর পেয়েই শের-এ-বাংলা ফজলুল হক, মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন, শিামন্ত্রী নাজিম উদ্দীন খান, সিভিল সাপ্লাই মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি ও অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা ছুটে যান শেষ বারের মত এই মহান মানুষকে দেখার জন্য।

মৃত্যুর ৬৮ বছর পর ব্রিটেনের বিরল সম্মানে ভূষিত হলেন বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পি.সি রায়)। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্সের এক অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিষ্ট্রির (আরএসসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রবার্ট পার্কার জানান, তাঁরা বাঙ্গালী বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায়কে “কেমিক্যাল ল্যান্ড মার্ক প্লাক” দিয়ে বিশেষ সম্মাননা জানাবেন। এ খবর পেয়ে বিজ্ঞানীর জন্মস্থান পাইকগাছা, খুলনাসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়েছিল। রসায়ন গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃিত হিসেবে আরএসসি “কেমিক্যাল ল্যান্ড মার্ক প্লার্ক” দিয়ে থাকে। বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা এবং মার্কিউরাস নাইট্রাইটের আবিষ্কারক। এই আবিস্কারের জন্য আরএসসি তাঁকে এ বিরল সম্মাননা জানান। 

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর পদচারনা ও নিজ হাতের ছোঁয়ায় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আজও অবহেলীত রয়েছে। খুলনা জেলা থেকে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি পিসি রায়ের জন্মভূমি পর্যন্ত। পাইকগাছা উপজেলা থেকে এখনও বিছিন্ন ফাদার অব নাইট্রাইট খ্যাত বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায়ের জন্মস্থান রাড়–লী গ্রামটি আজও অবহেলিত। সরাসরি সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম বোয়ালিয়ায় কপোতা নদের উপর আজও নির্মিত হয়নি ব্রীজটি, কবে হবে তা কেউ বলতে পারেনা। তবে এ অঞ্চলবাসী আশায় বুক বেঁধেছেন।
 
পিসি রায়ের স্মৃতি বিজড়িত ভবনগুলো রণাবেণের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে। সংরণে এখনই পদপে না নিলে এক সময় তা কালেরগর্ভে হারিয়ে যাবে। দিন দিন সেগুলো শ্রীহীন হচ্ছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় বিভিন্ন ভাবে অপচেষ্টা চলে পি,সি রায়ের জন্মভূমি স্মৃতি চিহ্ন বসতভিটা দখলের। সর্বশেষ ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে স্মৃতিচিহ্ন বসতভিটা দখল নেয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এতে ফুসে উঠে পি,সি, প্রেমী এলাকার সচেতন মানুষসহ প্রসাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা। কঠোর আন্দোলনের মুখে সে সময় রাতের অন্ধকারে ঐ স্থানের মূল্যবান সম্পদ নিয়ে পালিয়ে যায় কথিত দখলদাররা। 

এখনও যেনতেন ভাবে অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। আয়োজকবৃন্দ প্রতিবারই বলে থাকেন আগামীতে সাংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ের অধীনে জাক জমক ভাবে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেগুলো শুধুমাত্র বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। আয়োজকবৃন্দ বলেন, গত বছর সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্ধকৃত টাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান পালনের জন্য দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পাইকগাছার জন্য কোন অর্থ বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে পিসি রায়ের জন্ম ভিটাবাড়ি সরকারের প্রতœত্ত্ব বিভাগ সংরণ করছে।

এলাকাবাসীর দাবী মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি সাগরদাঁড়িতে যেভাবে রনাবেন এবং মাইকেল মধূসূদন দত্তের জন্মাবার্ষিকীতে মন্ত্রীদের পদচারনায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো সাগড়দাঁড়ি। সেভাবেই বরেন্য পিসি রায়ের জন্মাবার্ষিকী ধুমধামের সহিত পালিত হোক এবং রাড়–লী পিসি রায়ের জন্মভূমিতে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর হস্তপে কামনা করেছেন

No comments:

Post a Comment