মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার ইতিহাস
হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস। প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালিত হয়
‘মা দিবস’। .মনে হতে পারে, মায়ের ভালোবাসার জন্য আবার আলাদা করে একটি দিন
রাখার কী দরকার? আমরা সবাই তো আমাদের মাকে প্রতিদিনই খুব ভালোবাসি। কিন্তু,
শুধু মায়ের ভালোবাসার জন্য একটি আলাদা দিন থাকার মজা হল। এদিন পৃথিবীর সকল
সন্তান একসঙ্গে সব মাকে শুভেচ্ছা জানাবে, উপহার দিবে। শুধু তাই না, এদিনে
কিন্তু শুধু নিজের মাকে ভালোবাসলেই হবে না, সম্মান জানাতে হবে সকল মাকেই।
এই ‘মা দিবস’ পালনের চিন্তাটা কিন্তু বেশ
পুরনো। এমনকি কয়েক হাজার বছর আগেও মা দিবস পালন করা হত। মিশর, রোম ও গ্রিসে
মা দিবস পালন করা হত খ্রিস্টের জন্মের অনেক আগে থেকেই। তবে সে মা দিবসটা
এখনকার মা দিবসের মতো ছিল না। তখনকার মা দিবস ছিল দেবতাদের মায়ের দিবস।
সেদিন বিভিন্ন দেবতার মায়ের আরাধনা করা হত। আরাধনা করা হত দেবী আইসিসের
কিংবা সিবিলির অথবা রিয়ার।
সত্যিকারভাবে মায়েদের জন্য দিবস পালন শুরু
হয় ১৬ শতকে এসে, ইংল্যান্ডে। দিনটিকে ওরা বলত, মাদারিং ডে। এদিন সরকারি
ছুটিও ছিল। মাদারিং ডে তে পরিবারের সবাই মায়ের কাছে এসে, মায়ের সঙ্গে
সারাদিন কাটাত। তবে শেষতক এই দিবসটি তেমন প্রসার লাভ করেনি।
ব্রিটিশরা যে পৃথিবীর নানা অঞ্চলে উপনিবেশ
স্থাপন করেছিল। এমনকি আমেরিকাও ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। তখন ইংল্যান্ড থেকে
দলে দলে লোকজন আমেরিকায় গিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। আমেরিকায় আসা
এই
ব্রিটিশরা আমেরিকাতেও মাদারিং ডে চালু করার চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য
সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
এরও প্রায় ১০০ বছর পরের কথা। ১৮৭০ সালে
আমেরিকান গীতিকার জুলিয়া ওয়ার্ড হাও মা দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। তার
অবশ্য অন্য আরেকটা উদ্দেশ্যও ছিল। তখন আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ চলছে। একই দেশের
মানুষ একজন আরেকজনকে কারণে-অকারণে হত্যা করছে। এক মায়ের সন্তান হত্যা করছে
আরেক মায়ের সন্তানকে। তখন তিনি চিন্তা করলেন, দেশের সব মাকে যদি একজোট করা
যায়, তখন তো কোনো মায়ের সন্তান আর পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে পারবে না। আর
সে কারণেই তিনি মা দিবস পালনের প্রস্তাব করলেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে
ঘোষণা করারও চেষ্টা করেন তিনি। তা অবশ্য তিনি করতে পারেননি। তবে তার শহর
বোস্টনে দিবসটি পালিত হচ্ছিল বেশ ঘটা করেই।
ভার্জিনিয়ার এক দল নারী জুলিয়া ওয়ার্ড
হাও-এর প্রস্তাবিত মা দিবসটি বেশ মর্যাদার সঙ্গে পালন করত। এই দলটির
নেত্রী ছিলেন অ্যানা রিভেস জারভিস। তিনি আবার গৃহযুদ্ধের সময়ে ‘মাদারস
ফ্রেন্ডসিপ ডে’ পালন শুরু করেছিলেন।
অ্যানা রিভেস জারভিস ২০ বছর
কাটিয়েছিলেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের একটি গির্জায়। সেখানে তিনি সানডে
স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। সঙ্গে সরকারিভাবে মা দিবস পালনের জন্য আন্দোলন
করছিলেন। তিনি মারা গেলে, তার মেয়ে অ্যানা এম জারভিস আন্দোলনের হাল ধরেন।
অ্যানা চাচ্ছিলেন জীবিত-মৃত সব মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য এই দিবসটি
পালন করতে। এই লক্ষে তারা ১৯০৮ সালে গ্রাফটনের ওই গির্জার
সুপারিনটেনডেন্টের কাছে একটি আবেদন জানান। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে সে বছরই
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভেনিয়ার কয়েকটি গির্জায় মা দিবস পালিত হয়।
আরও অনেক পথ পেরিয়ে অবশেষে সরকারিভাবে মা
দিবস উদযাপন শুরু হয় ১৯১৪ সালে। তখনকার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন
মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে জাতীয় মা দিবসের স্বীকৃতি দেন। পরে আমেরিকার
স্বীকৃত এই মা দিবসকেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ১৯৬২ সালে।
বাংলাদেশও এই দিনটিকেই মা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। সে হিসেবেই, এ বছর মা
দিবস হচ্ছে ১২ মে।
তবে পৃথিবীর সব দেশই যে মে মাসের
দ্বিতীয় রোববারকেই মা দিবস হিসেবে পালন করে, তা কিন্তু নয়। নরওয়েতে মা দিবস
পালন করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় রোববার। আবার নেপালে মা দিবসে
মায়েদের নিয়ে একটা আস্ত উৎসবই হয়। উৎসবটির নাম ‘মাতা তীর্থ পূজা’।
থাইল্যান্ডে মা দিবস পালন করা হয় ১২ অগাস্ট। কারণ এদিনে জন্মেছিলেন তাদের
রানি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ মালদ্বীপে মা দিবস পালন করা হয় ১৩ মে।
বুলগেরিয়াতে আবার মা দিবস পালন করা হয় নারী দিবসের সঙ্গে মিলিয়ে, ৮ মার্চ।
এমনি নানা দেশে নানা দিনে মা দিবস পালন
করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিনে পালন করা হলেও, মা দিবসের মূল কথা
কিন্তু একটাই- মার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা। একযোগে সব্বাই মিলে সকল মাকে
ভালোবাসা জানানো, সম্মান জানানো, শ্রদ্ধা জানানো।
No comments:
Post a Comment