পুরুষের বাহুমূলের গন্ধই বলে দেয় যে তিনি একজন পুরুষ। এ গন্ধ বিপরীত লিঙ্গকেও পুরুষের পরিচয় বুঝিয়ে দেয়। তেমনি নারী মূত্রের গন্ধ বলে দেয় তিনি নারী। বেইজিংয়ের চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ঘ্রাণ বিজ্ঞানী ওয়েন ঝু এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানান- যা কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
গবেষক জানান, আমাদের এ গবেষণায় দেখানো হয়েছে কিভাবে সেক্স ফেরোমোনস মানুষের মধ্যেও কাজ করে। ফেরোমোনস হচ্ছে এক ধরনের রাসায়নিক সংকেত যা পশু-পাখিরা যৌন মিলন এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করে। এই রাসায়নিক সংকেত রেপটাইল, হিংস্র প্রাণী এবং অন্যান্য পশুর ক্ষেত্রে কার্যকর। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে তা কার্যকর নয়। যৌন মিলনের সঙ্গী বা সঙ্গিনী খুঁজতে তারা এই রাসায়নিক সংকেতের গন্ধ কাজে লাগায়, মানুষ এই ঘরানার প্রাণী নয়।
ঝু বলেন, মানুষের দেহের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় যে গন্ধ বের হয় তার প্রভাবে কিছু আচরণ প্রকাশ পায় যা পশুদের সঙ্গে মেলে। পুরুষ শূকরের মুখের লালার গন্ধ নারী শূকরকে তাৎক্ষণিকভাবে মিলিত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, পুরুষের দেহের রসায়ন, এন্ড্রোস্টাডিওন, অণ্ডকোষে পাওয়া স্টেরয়ড, বাহুমূল এবং চুলের গন্ধ নারী হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয় এবং যৌন মিলনে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করে দেয়। একইভাবে নারীর মূত্রে প্রাপ্ত ইস্ট্রোজেনের মতো এক ধরনের কম্পাউন্ড রয়েছে যাকে বলে এস্ট্রাটেট্রাইনল। এর গন্ধে পুরুষের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।
এসব স্টেরয়ডের গন্ধ মানুষের যৌনতার তথ্য প্রকাশ করে কি না, তা কেউ জানে না। ঝু বলেন, তিনি ও তাঁর দল ৪৮ জন পুরুষ এবং ৪৮ জন নারীকে নিয়ে পরীক্ষা চালান। এদের মধ্যে অর্ধেক ছিলেন সমকামী অথবা উভকামী। তাদের এসব স্টেরয়েড এবং লবঙ্গের ঘ্রাণ নিতে দেওয়া হয়। গন্ধ নেওয়ার সময় একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয় যেখান কিছু ডটের মাধ্যমে মানুষের দেহ প্রকাশ করা হয়। তবে ওই দেহ পুরুষ না নারীর তা বোঝা যাচ্ছিল না। অংশগ্রহণকারীদের কাজটি ছিল, গন্ধ নিয়ে বলতে হবে ভিডিওচিত্রের চরিত্রটি
নারী না পুরুষ। যখন নারীদের গন্ধ পুরুষদের, পুরুষদের গন্ধ নারীদের এবং সবার নাকে লবঙ্গে ঘ্রাণ দেওয়া হয়, তখন তারা সবাই বিপরীত লিঙ্গকে শনাক্ত করতে পারে। এই গন্ধের সঙ্গে মিলিয়ে ভিডিওচিত্র থেকে নারী বা পুরুষ চিহ্নিত করতে পেরেছিল তারা।
এই পরীক্ষায় আরো দেখা যায়, সমকামী পুরুষরা অন্য পুরুষের গন্ধে কামুক নারীদের মতো আচরণ করে এবং সমকামী ও উভকামী নারীরা পুরুষের গন্ধে কামুক পুরুষের মতো আচরণ করে।
এ পরীক্ষা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার স্মেল অ্যান্ড টেস্ট সেন্টারের প্রধান রিচার্ড ডটি। তিনি বলেন, পরীক্ষায় যে স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছিল তাতে গলদ ছিল। কারণ মানুষের চুলে বা অন্য স্থানে যে স্টেরয়েড থাকে তার গন্ধে এমন তীব্রতা নেই যে, তা লিঙ্গের ভেদাভেদ ধরতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব সাইদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার নিউরোলজিস্ট এমিলি লিমান বলেন, আমাদের আগে বুঝতে হবে দেহের কোন অঙ্গ রাসায়নিক ঘ্রাণ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া সেসব ঘ্রাণের তীব্রতা সম্পর্কেও আমাদের ধারণা থাকতে হবে। সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার
No comments:
Post a Comment